দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে কানাডা পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস চেয়ারম্যান নাহিদা রুনাইকে গ্রেফতার করেছে দুদক। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবি হিসেবে পরিচিত নাহিদা রুনাইয়ে বাড়ি চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায়। রুনাইয়ের বাবার নাম মফিজুর রহমান। তিনি চট্টগ্রামে একটি সরকারি দপ্তরে ‘করণিক’ পদে চাকরি করতেন।
নাহিদা রুনাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে চাকরি পান।
চাকরির সুবাদে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় পি কে হালদারের সঙ্গে। ২০০৯ সাল থেকে রিলায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। ২০১২ সালের দিকে পি কের সঙ্গে পরিচয় রুনাইয়ের। পি কে হালদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এত বেশি হয়ে যায় যে, তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এসএমই লোন শাখার অফিস এক্সিকিউটিভ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধান পি কে হালদারের বান্ধবী ‘বড় আপা’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন পি কে হালদার।
পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে নাহিদা রুনাইকে নিয়ে আসেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে। দ্রুত সময়ে তাকে ৪ টি পদোন্নতি দিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট করেন পি কে হালদার।
তবে রুনাইর পাশাপাশি পি কে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অবন্তিকার খোঁজ পাওয়া গেছে। তিনি ছোট আপা নামে পরিচিত। তিনি চালাতেন পিপলস লিজিং। এই দুইজনের সঙ্গে পি কে হালদারের সম্পর্ক ছিল স্বামী-স্ত্রীর মতো।
আর এই দু’ই নারী একে অপরের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল সতীনের মতো।
হালদারকে কাছে পেতে মরিয়া ছিলেন এ দু’জন। নিজের রূপ, যৌবন দিয়ে কাছে টেনে রাখতে চাইতেন। এ নিয়ে এক ধরনের যুদ্ধ চলছিল অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইয়ের মধ্যে। কিন্তু দু’জনকেই একান্তে চাইতেন পি কে হালদার। একজনের অজান্তে অন্যজনকে নিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতেন। চলে যেতেন দেশের বাইরে।
পি কে হালদারের সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। সেই মামলায় আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের কাছে দেওয়া ওই জবানবন্দিতে নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকা বড়ালের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন উজ্জ্বল কুমার নন্দী।
জবানবন্দিতে রুনাইকে ‘বড় আপা’ উল্লেখ করে উজ্জ্বল বলেন, ‘পি কে হালদারের ২ বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাই। এই দু’জনের সঙ্গে তিনি পৃথকভাবে ২০ থেকে ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। পি কে হালদারের সঙ্গ পাওয়া নিয়ে ওই দু’জনের মধ্যে চলতো ব্যাপক প্রতিযোগিতা। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদারকে আলাদাভাবে সময় কাটাতে দেখা যায়।
এর আগে ১৩ জানুয়ারি দুদকের একটি দল রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে অবান্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করে। এখন পর্যন্ত তিনি কারাগারেই আছেন। পিকে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে এই অবন্তিকার বিরুদ্ধে।
এর আগে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পি কের টাকা পাচারের অন্যতম সহযোগী এই নাহিদা রুনাই। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কত টাকা আত্মসাৎ ও পাচার হচ্ছে সেই হিসাব রাখতেন রুনাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন মহলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে রুনাইয়ের দক্ষতা অপরিসীম। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে সিদ্ধহস্ত।
দুদকের অনুসন্ধান দলের একজন কর্মকর্তা বলেন, পি কের দখলে থাকা ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের ১০০ কোটি টাকা নিজের মতো করে খরচ করার সুযোগ পান রুনাই। এ ছাড়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিতে (বিআইএফসি) রুনাইয়ের প্রভাব ছিলো উল্লেখ করার মতো।