স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলতে দেওয়ার দাবি

প্রকাশিত: ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২১

 

করোনার বিস্তার ঠেকাতে সাত দিনব্যাপী নানা বিধি-নিষেধের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। ঢাকায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো নিউ মার্কেট ও গাউছিয়া এবং এলিফ্যান্ট রোডের দোকান মালিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছেন। ‘লকডাউন মানি না, মানব না,’ ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব, দোকানপাট খুলব’সহ নানা স্লোগান দেন তাঁরা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে না দিলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। রাজশাহী, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়ীরাও বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।

kalerkanthoগতকাল সোমবার নিউ মার্কেটে শতাধিক দোকান মালিক, ব্যবসায়ী ও কর্মচারী সকাল ৯টায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তা ঠিক হয়ে যায়। নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দোকান মালিক সমিতির লোকজন বিক্ষোভ করেছেন। তবে আমরা তাঁদের বুঝিয়েছি, লকডাউন দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই।

তাঁদের আমরা সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। তাঁরা বুঝেছেন। তবে তাঁরা অনলাইনে ব্যবসা করার দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাঁদের সহযোগিতা করব, বলেছি।’

বিক্ষোভে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা, শিল্প-কারখানা খোলা, মেলা হচ্ছে। তাহলে আমাদের পেটে লাথি কেন? তাঁরা দাবি করছেন, গত বছরের ‘লকডাউনে’ তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার ঈদ সামনে রেখে ক্ষতি পোষানোর আশায় নতুন মালপত্র উঠিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা থাকলে তাঁদের ব্যবসায় ধস নামবে।

নুরজাহান মার্কেটের ব্যবসায়ী রাশেদ হোসেন বলেন, ‘আমার দুইটা দোকান ছিল। করোনার কারণে একটা দোকান ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। এবার লকডাউন দিলে এটাও ছাড়তে হবে। ব্যাংকের লোন আছে। পরিবার আছে। আমরা কোথায় যাব?’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সরকার দোকান খোলা রাখার সময়সীমা বেঁধে দিলেই হয়। তাঁরা এই সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে চান। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনায় মরতে হবে। আর দোকানপাট বন্ধ থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা সড়কের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করেছেন। এর পর থেকে তাঁরা চলে যেতে থাকেন।

চট্টগ্রামে আন্দোলনের হুমকি : চট্টগ্রামের তামাকুমণ্ডি লেনের ব্যবসায়ীরা বিধি-নিষেধের প্রতিবাদ করে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন। পাঁচ শরও বেশি ব্যবসায়ী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। তামাকুমণ্ডি লেন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির দুলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল-সন্ধ্যা দোকান খোলা রাখতে চাই। এর সুযোগ দেওয়া না হলে আমরা আগামীতে আন্দোলনের কর্মসূচি দেব।’

রাজশাহীতে বিক্ষোভ : দোকান খুলতে না দেওয়া হলে আজ মঙ্গলবার থেকে নিজেরাই ব্যবস্থা নেবেন বলে হুঁশিয়ার করেছেন রাজশাহীর সাহেববাজার আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ও কর্মচারী। পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম কথা বলেন। সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের আস্থা রাখার জন্য আহ্বান জানান তিনি। রাজশাহী কাপড়পট্টি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামিম বলেন, ‘গত বছর আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঠিকমতো ঈদও করতে পারিনি টাকার অভাবে। এবারও ঈদের আগে লকডাউন দেওয়া হলো। লকডাউন চলছে চলুক, আমাদের দোকানপাট খোলার জন্য একটা সময় বেঁধে দিলে ভালো হবে।’ তাঁরা অভিযোগ করেন, ‘আমানা বিগ বাজার এবং বিভিন্ন মেলাসহ নানা ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। শুধু আমরা রাজশাহীর কাপড় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছি না।’

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো শুনেছেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

বগুড়ায় ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন : ‘লকডাউন প্রত্যাহার করুন, অর্থনীতির চাকা সচল করুন, অনাহারের বিরুদ্ধে লড়াই করুন’ স্লোগানে বগুড়ার রানা প্লাজার ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে শপিং মল খোলা রাখাসহ বিভিন্ন দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন, সার্ভিস চার্জ দেওয়া তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হলে সরকারকে সব ব্যবসায়ীকে প্রণোদনা/ভর্তুকি দিতে হবে।

মাগুরায় ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ মিছিল : মাগুরা শহরেও বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন মাগুরা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান লিটন। তিনি জানান, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিশেষ করে শহরের কাপড় ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। ‘লকডাউনের’ কারণে তাঁরা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। সে কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছুটা স্বল্প পরিসরে তাঁরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি করছেন। বিক্ষোভে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন। মাগুরা পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল বলেন, ‘করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে সরকার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে। আমাদের উচিত লকডাউনসহ সরকারি সব নির্দেশনা মেনে সম্মিলিতভাবে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।’

কালীগঞ্জে সড়ক অবরোধ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়কের ওপর বসে অবরোধ করেন ব্যবসায়ীরা। পরে কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহা. মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতারা আলোচনা করে দুপুরে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন। ওসি মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, ব্যবসায়ীরা কিছুক্ষণ সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

মেহেরপুরে বিক্ষোভ : বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মেহেরপুরের গাংনীর ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা। গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান স্বপনের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। ব্যবসায়ীরা বলেন, জনসাধারণের চলাচল স্বাভাবিক অথচ দোকানপাট বন্ধ রাখা হচ্ছে। রমজান ও ঈদের সময় ব্যবসা না হলে পথে বসতে হবে তাঁদের।