মো.মাইন উদ্দীন,চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
বাংলাদেশে হঠাৎ সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাওয়ার সীমিত পরিসরে সোমবার (২৮ জুন) ভোর থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে রিকশা ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ। তবে খোলা রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এতে অফিসগামী চাকরিজীবীরা পড়েছেন বিপাকে। কেউ হেঁটে আবার কাউকে প্রচলিত রিকশা ভাড়ার তিনগুণ দিয়ে পৌঁছতে হচ্ছে গন্তব্যে।
নিষেধাজ্ঞার প্রথমদিনে সাধারণের তুলনায় প্রায় কয়েকগুণ চাহিদা বেড়েছে রিকশার। তবে এই চাহিদা মূলত অফিসগামী লোকজনের। রাস্তায় ফাঁকা রিকশা পাওয়ায়ই যেন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণপরিবহন না থাকায় কোনো রিকশা এলেই অপেক্ষারত যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এর সুযোগ নিচ্ছেন রিকশাচালকরাও। চেয়ে বসছেন কয়েকগুণ ভাড়া। নিরুপায় হয়ে তাতেই চড়তে হচ্ছে।
অন্যদিকে এতো বেশি ভাড়া দিয়ে যাদের রিকশায় চড়ার সামর্থ্য নেই তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। শেষমেষ গন্তব্যের দিকে ছুটছেন পায়ে হেঁটেই।
সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসি, চকবাজার, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষারত অগণতি মানুষের ভিড় দেখা যায়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই অফিসগামী। রিকশাচালকদের দাপটে অনেকটা অসহায় সবাই। গন্তব্য একই স্থানে হওয়ায় অনেককে ভাড়া ভাগাভাগি করেও রিকশায় উঠতে দেখা গেছে।
কেউ কেউ পণ্য পরিবহনের ভ্যান ও মালবাহী পিকআপে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন অফিসে যাওয়ার জন্য। আবার অনেকে প্রাইভেটকার দেখলেই চেষ্টা করেছেন রাইড নেওয়ার।
অফিসগামী এসব যাত্রীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি ব্যবস্থাপনা নিয়ে। তাদের ভাষ্যমতে, সংক্রমণ রোধে সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে লকডাউন ঘোষণা করেছে কিন্তু অফিস-আদালত ঠিকই খোলা রেখেছে। এ কারণে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চাকরিজীবীদের।
সাংবাদিক কাজী হাসনে হেনা বলীর হাট থেকে পায়ে হেঁটে এসেছেন বহদ্দারহাট মোড়ে। তার গন্তব্যস্থল চেরাগী পাহাড়। তিনি বলেন, ‘সরকার অফিস বন্ধ করেনি কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ করেছে। এমনটা করে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর কথা বললেও দুর্ভোগ শতগুণে বেড়েছে। হাজার হাজার মানুষের এই দুর্ভোগ দেখার কি কেউ নেই?’
নগরের নতুনব্রীজ থেকে পাঁচলাইশ যাবেন ব্যবসায়ী মো.মোরশেদ। কখনো পায়ে হেঁটে আবার কিছুটা পথ রিকশায় করে মুরাদপুর পর্যন্ত এলেও আধাঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। তবে কোনো পরিবহনই পাচ্ছেন না এখন। এমনকি তিনগুণ ভাড়া দিয়েও মিলছে না কোনো রিকশা। কোনো ফাঁকা রিকশা এলেই যা ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে তাতেই রাজি হয়ে অন্যরা গন্তব্যে ছুটছেন।
ব্যবসায়ী সেকান্দর বলেন, একটা গাড়ি রাস্তায় নেই কিন্তু আমাদের অফিস করতে হচ্ছে। এই দুর্ভোগের শেষ কোথায়?’
আবুল হোসেন প্রকাশ বাটাম সওদাগর নামে আরেকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘লকডাউনে রাস্তায় গাড়ি নেই অথচ অফিস খোলা। যত কষ্টই হোক আমাদের মতো কর্মচারীদের অফিস করতেই হবে। অন্য গাড়ি না থাকায় রিকশাচালকেরা যেভাবে পারছে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। ১০০ টাকার ভাড়া তারা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা চাচ্ছে। কোনো তদারকি নেই, যার যা খুশি তাই করছে। এই হলো লকডাউন।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সোমবার (২৮ জুন) থেকে সীমিত, পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সাতদিন সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী আজ থেকে সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।