আদনান আল খাত্তাব, কাজাখাস্তানঃ
বাংলাদেশ! ৫ই আগস্ট, ছাত্র জনতার বিক্ষোভে পতন ঘটে দীর্ঘ পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদী আমলের। বাংলাদেশে এই ফ্যাসিবাদের উত্থান ছিলো বেশ রহস্যময়। বিগত পনেরো বছরে আওয়ামী সরকার যেভাবে ভারতীয় তোষণ নীতি অবলম্বন করেছে, তাতে তাদের উত্থানে ভারতের সম্পৃক্ততা অনেকটাই স্পষ্ট ছিলো৷ ২০০১-২০০৫, বিএনপি শাসনামলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়। বিশেষত বাবরদের মতো কঠোর ভারতবিদ্বেষি নেতারা ভারতের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে পড়েন। যা বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক চাল পুরোপুরি বদলাতে বাধ্য করে৷ মহানবী সঃ এর ব্যঙ্গাত্বক কার্টুনের প্রতিবাদে ২০০৭ সালে ফুঁসে উঠে বাংলাদেশের জনগণ। ভারতের প্রত্যক্ষ ইশারায় মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে উপস্থাপনা করা হয় বাংলাদেশে উত্থান হচ্ছে উগ্রপন্থীদের। এই সুযোগে নির্বাচনে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ বা সেকুলার রাজনৈতিক দল হিসেবে সহজেই ক্ষমতায় চলে আসে আওয়ামী লিগ। এর পরের দুটি নির্বাচনের পূর্বে জঙ্গি তৎপরতা অথবা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা সাজানো আওয়ামী লিগের রাজনৈতিক চাল হয়ে দাড়িয়ে ছিলো। সাজানো এসব উগ্রপন্থীদের ঠেকাতে বিশ্বের সামনে নিজেদেরকে একমাত্র মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে থাকে আওয়ামী লিগ। এই ফর্মুলাতে সহজেই পশ্চিমাদের কাছে বিকল্পহীন হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনা। এই সুযোগে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসি, শাপলা চত্বরে গণহত্যা, বিএনপি-জামাত সহ বিভিন্ন ইসলামিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন সহ নানা অপকর্মে পশ্চিমারা বাধা হয়ে দাড়ায়নি শেখ হাসিনার।
জুলাই এর বিল্পবে পতনের পরেও শেখ হাসিনা আবারো একই ধরনের চাতুরতার আশ্রয় নেন। ৫ই আগস্টের পরেই বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হতে থাকে হিন্দুদের নির্যাতনের নানা ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দল গুলো হিন্দুদের নিরাপত্তা দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা আওয়ামী লিগের পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে অনেকটাই। পরবর্তীতে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, হিন্দুদের নির্যাতনের প্রচারিত হওয়া খবরের অধিকাংশ ছিলো ভুয়া। দীর্ঘ সময় পর ২৫ অক্টোবর, চট্রগ্রামে হঠাৎ মহাসম্মেলনের ডাক দেয় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা৷ বাংলাদেশের পতাকার উপর উগ্রবাদী হিন্দুদের গেরুয়া পতাকা টানানো, এমনকি লংমার্চ-টু-ঢাকার ঘোষণা দেওয়া হয়৷ হঠাৎ করেই হিন্দুদের নতুন করে এই কর্মসূচি দেওয়াগুলো সন্দেহের উদ্বেগ ঘটায়। এরসাথে যুক্ত হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশ নিয়ে সেই বিষ্ফোরক মন্তব্য।
৫ নভেম্বর চট্রগ্রামে, ফেইসবুকে পোস্ট শেয়ারের গঠনাকে কেন্দ্র করে উগ্রবাদী ইস্কন আবারো হামলা চালায় একজন মুসলিম দোকানদারের উপর। এমনকি ঘটনাস্থলে যৌথ বাহিনী উপস্থিত হলে তাদের উপর এসিড নিক্ষেপসহ বর্বর হামলা চালায় উগ্রবাদী এই সংগঠনের কর্মিরা। আমেরিকা নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে ইস্কনের মাথাচাড়া দিয়ে উঠার ঘটনা স্পষ্ট বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ। স্পষ্টত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ভারতের বন্ধুত্ব পুরাতন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার অবস্থান একই হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। আর এটার মানেই হচ্ছে হাসিনা সরকারের ফেরত আসার সম্ভাবনা বেশি। বর্তমানে হাসিনা এবং উগ্রবাদী হিন্দুদের তৎপরতা তাই নির্দেশ করে। দেশের সার্বভৌমত্ব কিংবা জনগনকে বলি দিয়ে হলেও হাসিনা আবারো ক্ষমতায় আসতে চান। কিন্তু সমগ্র বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়ে ক্ষমতা দখল কতোটা সম্ভব? এটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়!