ডেস্ক নিউজ : আজ শহীদ নূর হোসেন দিবস, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এক উল্লেখযোগ্য দিন, যা গভীর শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এই দিনটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক প্রতীকী দিন, যেটি গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৯৮৭ সালের এই দিনে নূর হোসেন তার খালি বুকে ও পিঠে “স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক” এই সাহসী স্লোগান ধারণ করে ঢাকার জিরো পয়েন্টে স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে যোগ দেন। সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন এবং তার আত্মত্যাগ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের জন্য এক গভীর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।
নূর হোসেনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও প্রবল হয়। ১৯৮০-র দশকের শেষদিকে বাংলাদেশের মানুষেরা তৎকালীন স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় হন। নূর হোসেনের মৃত্যুর পর দেশব্যাপী গণমানুষের মধ্যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, এবং এ আন্দোলন দিনে দিনে আরও জোরদার হয়। নানা প্রতিবাদ, মিছিল, সভা ও সমাবেশের মাধ্যমে জনগণ ধীরে ধীরে তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসনের পতনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। শেষপর্যন্ত, এ আন্দোলনের চাপে স্বৈরশাসক এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।
নূর হোসেনের শহীদ দিবস উপলক্ষে আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় এই দিনটি পালন করছে। বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এবং অন্যান্য সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদ নূর হোসেনকে স্মরণ করছে। বিভিন্ন আলোচনাসভা, প্রদীপ প্রজ্বলন এবং গণমিছিলের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্য তার আত্মত্যাগের মহিমা তুলে ধরা হচ্ছে।
নূর হোসেনের এই আত্মত্যাগ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। তার জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে নিহিত আছে সাহস, চেতনা ও সংগ্রামের এক অনন্য উদাহরণ, যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে স্বৈরাচার ও অসাম্যবিরোধী মনোভাবকে আরও দৃঢ় করেছে। আজকের এই দিনটি শুধু নূর হোসেনকে নয়, বরং বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে, যারা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন।
আজকের শহীদ নূর হোসেন দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই কখনোই সহজ নয়, কিন্তু গণমানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই একমাত্র পথ যা আমাদের সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। নূর হোসেনের এই আত্মত্যাগ আমাদের সামনে অনুপ্রেরণার বাতিঘর হিসেবে সবসময় উজ্জ্বল থাকবে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য চলমান সংগ্রামে এই চেতনা প্রেরণাদায়ী ভূমিকা পালন করবে।
ref:anj101124/01