আনজার আল মুনির: ২১ নভেম্বর দেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল দিবস হিসেবে দিনটি ঘোষণা করার দাবি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জকিগঞ্জবাসীর। প্রতি বছর ২১ নভেম্বর দিনটি স্থানীয়ভাবে উদযাপিত হলেও, জাতীয় স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ রয়ে গেছে সেখানকার মানুষের।
স্থানীয়দের মতে, জকিগঞ্জকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া একটি বিরল সম্মান বয়ে আনবে। স্বাধীনতার পর থেকেই এই দাবি বাস্তবায়নের আশা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরপারে চলে গেছেন। তাঁদের স্বপ্ন পূরণে এখনো সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
মুক্তাঞ্চল জয়ের ইতিহাস
১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর ঈদের দিনে, ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে জকিগঞ্জে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। পরিকল্পিত এই অভিযানে পাক হানাদার বাহিনী সন্ধ্যার আগেই পরাজিত হয়। শত্রুমুক্ত হয় জকিগঞ্জ, আর স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ে মুক্ত আকাশে।
ঐতিহাসিক অভিযান
সিলেট সীমান্তবর্তী এই অঞ্চল ছিল ৪ নম্বর সেক্টরের অধীন। সেক্টর কমান্ডার মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্তের নেতৃত্বে, মুক্তিযোদ্ধারা একটি সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২১ নভেম্বর ভোরে জকিগঞ্জকে মুক্ত করেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীও এই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অভিযানের ক্রমপদ্ধতি
- প্রথম দল: লোহার মহল থেকে আক্রমণ।
- দ্বিতীয় দল: আমলসীদ দিয়ে অগ্রসর।
- মূল দল: জকিগঞ্জ কাস্টমস ঘাট থেকে নদী পার হয়ে শহরে প্রবেশ।
তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলায় পাক বাহিনী ভীত হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধারা আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়ক ধরে তাদের পরাজিত করে।
তবে অপারেশনে মিত্রবাহিনীর মেজর চমন লালসহ কয়েকজন সেনা প্রাণ হারান। অভিযান শেষে ৭-৮ জন পাক সেনাকে আটক এবং প্রধান ডাকঘর থেকে এক সেনা অফিসারসহ ভারী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
প্রথম মুক্তাঞ্চলের উদযাপন
২১ নভেম্বর ভোরে জকিগঞ্জবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগানে স্বাগত জানান। আবেগঘন পরিবেশে দীর্ঘ আট মাস পর স্বজনদের কাছে ফিরে যান মুক্তিযোদ্ধারা। পরদিন, ২২ নভেম্বর, স্থানীয় নেতারা কুশিয়ারা নদী পার হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
স্বীকৃতি আদায়ের দীর্ঘ প্রচেষ্টা
স্বাধীনতার পর থেকেই জকিগঞ্জকে প্রথম মুক্তাঞ্চল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপিত হয়েছে। ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে ‘জকিগঞ্জ প্রথম মুক্তাঞ্চল বাস্তবায়ন পরিষদ’ গঠন করা হয়। কিন্তু এত বছর পরেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা
জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা আশা করছেন, অন্তত তাঁদের জীবদ্দশায় দিনটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবে। তাদের দাবি, জকিগঞ্জের এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জাতীয় পর্যায়ে মর্যাদা লাভ করুক।
তথ্যঃবাংলানিউজ২৪ডটকম
ref:anj211124/01