উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন কী চায়

Daily Daily

Zakiganj

প্রকাশিত: ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
ভবিষ্যতে হিন্দুদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের স্বার্থেই বাংলাদেশে ইসকন নামক ভূঁইফোঁড় সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা উচিত
  • ইসকনকে ‘প্রকৃত অর্থেই ধর্মবিরোধী ও পেশীশক্তি’ বলছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘ
  • ইতিপূর্বে স্কুলে স্কুলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মন্ত্র পড়িয়ে চরম বিতর্ক

বরাবরই বিতর্ক, সমালোচনা ও রহস্যের ধূম্রজালে হরেক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে ‘ইসকন’ নামের সংগঠন। এবার ইসকনকে ‘উগ্রবাদী, প্রকৃত অর্থেই ধর্মবিরোধী ও পেশীশক্তি প্রদর্শনকারী’ বলছেন চট্টগ্রামের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘের নেতৃবৃন্দ।
বন্দর নগরীর প্রাণকেন্দ্র পাঁচলাইশ প্রবর্তকের কিছু ভূমি ইসকনকে চুক্তির মাধ্যমে দিয়েই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রবর্তক নেতারা গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।
তারা ইসকনকে হুঁশিয়ার করেন, ভূমি ব্যবহারের জন্য চুক্তির শর্তাবলি লংঘন হলে চুক্তি বাতিল করবে প্রবর্তক কমিটি। ইসকনের বিরুদ্ধে তারা প্রবর্তকের কর্তব্যরত কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা অন্তত ১২ জনকে আহত করার অভিযোগ তুলে ধরেন।
হিন্দুদের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘের নেতাদের অসহায়ত্ব ও আকুতি নিয়ে আজ রোববারও এখানে সেখানে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা ও বিতর্ক চলছে। নানামুখে প্রশ্ন ও কৌতূহল উচ্চারিত হচ্ছে, ইসকনের খুঁটির জোর কোথায়? যেখানে স্বয়ং হিন্দু নেতারা অসহায় অবস্থায় পড়লেন?
ইতিপূর্বে চট্টগ্রামে ইসকন নেতা-কর্মীরা সদলবলে স্কুলে স্কুলে ‘খাবার বিতরণের’ আড়ালে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মন্ত্র পড়তে অপকৌশলে একরকম বাধ্য করে চরম সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়ে উগ্র সংগঠনটি। এরজন্য ইসকন নেতারা ক্ষমা চান প্রকাশ্যে। তবুও এদের আচরণে পরিবর্তন আসেনি। একের পর এক চরম বিতর্কিত ও উগ্রবাদী ঘটনায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, বাংলাদেশে কী চায় এই ইসকন?
২০১৯ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে ইসকন ফুড ফর লাইফের খাবার বিতরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায় শিশুদের খাওয়ার পূর্বে ‘হরে কৃষ্ণ’ জপতে বলা হচ্ছে। অবশ্য এ নিয়ে পরবর্তীতে দুঃখ প্রকাশ করেন ইসকনের কতিপয় ব্যক্তি।
উইকিপিডিয়ায় জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ হল গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী একটি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। যার জন্ম বা সৃষ্টি বিদেশে। এমনকি ভারতেও নয়। ১৩ জুলাই ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ইসকন নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন (ISKCON) ‘ধর্মীয় উদ্দেশ্য নিয়ে জনসেবা, শিক্ষা, ধর্মচর্চা, অধ্যাত্মিক চর্চা’ করবে। অথচ বাস্তবে কী করছে ওরা? ইসকনের সদর দপ্তর মায়াপুর, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
ইসকন উগ্রবাদী, প্রকৃতপক্ষে ধর্মবিরোধী ও পেশীশক্তি সংগঠন: প্রবর্তক সংঘ চট্টগ্রাম
ইসকনকে উগ্রবাদী সংগঠন বলে মন্তব্য করে প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী বলেছেন, চট্টগ্রামে প্রবর্তক সংঘের ভূমি ব্যবহারের শর্ত ভঙ্গ করলে ইসকনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে। শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আধ্যাত্মিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির নির্মাণের জন্য ইসকনের সঙ্গে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চুক্তি হয়। যার ফলে বর্তমান মন্দিরটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। মন্দিরটি সাধুনিবাস ও সমাধি মিলিয়ে মোট ১৬ হাজার ৩৭৬ বর্গফুট অর্থাৎ ১৮ দশমিক ৯৫ গন্ডা পাহাড় শীর্ষে জায়গার ওপর নির্মিত।
তিনি বলেন, প্রবর্তকের ভূমির প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক উন্নয়নে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে সম্পদের সদ্ব্যবহার করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য কারো খেয়ালবশত এই সম্পত্তি ব্যবহারে আমরা অনুমতি দিতে পারি না।
ইসকনকে উগ্রবাদী সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত রোরবার ইসকন মন্দির থেকে দুষ্কৃতকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবর্তক সংঘের কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে আহত হয় আন্তত ১২ জন।
সাধুর ছদ্মবেশে একদল সন্ত্রাসী প্রবর্তক শ্রী শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরে অবস্থান করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসকনের পুরহিতদের কাজ পূজা, আর্চনা করা। কিন্তু ইসকনের সদস্যরা সংঘের ভূমি দখলসহ নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। ইসকনের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে ব্যর্থ হওয়ার পর তিন দফা চিঠি পাঠিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হয়। গত এক মাস যাবৎ এই প্রয়াসে ব্যর্থ হয়ে পরিবেশগত সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রয়োজনে প্রবর্তকের জায়গায় নির্মিত ছোট নিরাপত্তা চৌকিটি সংস্কারের জন্য গত ১৪ মার্চ তিনজন শ্রমিক নিয়োজিত থাকাকালীন ইসকনের কয়েকজন এসে কাজে বাধা দেয়। এসময় হামলায় আহত হন প্রবর্তকের কর্মচারীরা।
অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান প্রবর্তক সংঘের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রবর্তক সংঘের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র লালা, সহ-সভাপতি প্রফেসর রনজিৎ কুমার দে, ট্রেজারার ডা. শ্রীপ্রকাশ বিশ্বাস, সদস্য অ্যাডভোকেট স্বভূ প্রসাদ দত্ত, ইন্দু নন্দন দত্ত, চন্দন ধর প্রমুখ।
‘উগ্রপন্থী হিন্দু সংগঠন ইসকন বাংলাদেশে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরী করছে’
স্বদেশ বার্তা পত্রিকায় উপরোক্ত শিরোনামে লেখক নয়ন চ্যাটার্জি তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, “এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, বাংলাদেশের হিন্দু নেতা ও সংগঠনগুলোর পরিস্থিতি সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত। তাদের অবস্থান পরিস্কার করে বলা উচিত, “ইসকন যে কাজ করেছে তার দায় বাংলাদেশের হিন্দুরা বহন করবে না এবং ইসকনের কাজ অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর পায়তারা”, প্রয়োজনে সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র করার জন্য হিন্দুনেতাদের উচিত ইসকনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া।
আমার জানা মতে, ইসকন হিন্দু ধর্ম থেকে আগত কোন সংগঠন না এবং সংগঠনটি তৈরী হয়েছে আমেরিকা নিউইয়র্কে এবং সংগঠনটির প্রধানও খ্রিস্টান চার্চ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এক ব্যক্তি। এই সংগঠনটি বাংলাদেশে সনাতন হিন্দুদের কাছে আতঙ্কস্বরূপ, কারণ এই সংগঠনটি যেখানেই যায়, সেখানেই সনাতন হিন্দুদের মন্দির দখল করতে উঠেপড়ে লাগে।
ঢাকার স্বামীবাগের ইসকন মন্দিরটি আগে একটি সনাতন হিন্দু মন্দির। সেই মন্দিরের জমির মালিক সনাতন হিন্দু ব্যক্তিকে মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে সেখানে তারা ইসকন মন্দির গড়ে তুলেছে। একইভাবে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকায় শ্রী শ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরে সনাতনদের উপর অত্যাচার করে আসছে ইসকনীরা। ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রশিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গাপূজা নিয়ে ইসকনপন্থি ও সনাতন ধর্মালম্বীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় ইসকন ভক্তদের হামলায় ফুলবাবু নামে একজন সনাতন নিহত হয়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা প্রশাসন মন্দির সিলগালা করে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তারপর থেকে ওই মন্দিরে পূজার সময় সংঘর্ষের আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
ইসকন সংগঠনটি উগ্র ধরনের সংগঠন। বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করে, সেটা ভাঙ্গার জন্য বার বার চেষ্টা করে এই সংগঠনটি। যেহেতু পার্শ্ববর্তী ভারতে উগ্র হিন্দুরা সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নির্যাতন করছে, সেহেতু বাংলাদেশে সেই সাম্প্রদায়িকতার উল্টা রেশ আনার জন্য প্রয়োজন এ অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী বিভিন্ন কাজে ইন্ধন দেয়া, যেন মুসলমানরা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ক্ষেপে যায়। এ কাজটি বিভিন্ন সময় রুটিনওয়ার্ক হিসেবে দিয়ে থাকে ইসকন। যেমন-
১) ২০১৪ সালে স্বামীবাগে তারাবীর নামাজে বাধা দেয় ইসকন । সে সময় হিন্দু-মুসিলম সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পুরো দেশে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বিরাজ করে।
২) ২০১৬ সালে সিলেটে ইসকন মন্দির থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদের মুসল্লীদের উপর গুলি বর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ইসকনীদের হামলায় ডজনখানেক মুসল্লী গুরতর আহত হয়।
৩) ইসকনের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়ায় ২০১৬ সালে খুন হয় সিলেটের এক মসজিদের ইমাম।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এখানে হিন্দু-মুসলিম একত্রে শান্তিতে বাস করে, কিন্তু ইসকন নামক উড়ে এসে জুড়ে বসা সংগঠনটি সেই সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করে মুসলিম-হিন্দুর মধ্যে বড় ধরনের দাঙ্গা বাধাতে চায়, যার পরবর্তী সুবিধা নিবে ভারতের উগ্র বিজেপি ও রামভক্তরা।
আর এটা মেনে নিতেই হবে, বাংলাদেশে দাঙ্গা হলে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে সখ্যালঘু সনাতন হিন্দুরা। তাই ভবিষ্যতে হিন্দুদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের স্বার্থেই বাংলাদেশে ইসকন নামক ভূঁইফোঁড় সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা উচিত।

সুত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব  (২১ মার্চ, ২০২১)

anjar271124/1