২৭ নভেম্বর ২০২৪, পুতিন কাজাখস্তান দুইদিনের সফরে গিয়েছিলেন । দুই দেশে এই সফরের প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন ডেইলি জকিগঞ্জ এর আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক ,কাজাখস্তান আল ফারাবি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আদনান আল খাত্তাব ।
ফেব্রুয়ারী ২০২২ এ শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট প্রায় তিন বছরে পা দিতে চলছে। গ্লোবাল কনফ্লিক্ট ট্রেকার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন এখন পর্যন্ত দখল হওয়া ৫৪ শতাংশ ভূমি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে, যদিও এখনো ইউক্রেনের মোট আঠারো শতাংশ ভূমি রাশিয়ার দখলে। ইউক্রেনে আমেরিকাপন্থী জেলেনেস্কি সরকার ক্ষমতায় বসা, ইউক্রেন ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার আকাঙ্খা ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলো। শুরু থেকেই বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেন ইস্যুকে গুরুত্বসহকারে দেখেছে। এখন পর্যন্ত ইউক্রেন প্রায় ২৭৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহযোগিতা পেয়েছে যার মধ্যে ৭৫ বিলিয়ন আমেরিকার।
সময় গড়িয়েছে! ২৪ এর আমেরিকান নির্বাচনে ট্রাম্প প্রশাসন বিজয়ী। ইউক্রেন যেই ন্যাটোতে যুক্ত হওয়া নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের সূত্রপাত, ট্রাম্প প্রশাসন অনেকটাই তার বিরোধী। বিশেষত আমেরিকা যে বিভিন্ন সংস্থা এবং দেশে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে ট্রাম্প তার কঠোর সমালোচক। ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতি, আমেরিকার অর্থ আমেরিকায় রাখার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে ইউক্রেন তেমন একটা অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে না। নির্বাচনী সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্তেহার ছিলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করা। ট্রাম্প বাইডেনের সমালোচনায় প্রায়ই বলে এসেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় থাকলে মুহূর্তের মধ্যেই এই যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেতো৷ ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন আবারো। এইদিক দিয়ে পুতিন নিশ্চয়ই খুশিই হয়েছেন। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যুক্র হওয়া নিয়ে তার আর বাড়তি চিন্তার প্রয়োজন নেই। আর যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে যদি ট্রাম্প উদ্যোগ নেন তাহলে পুতিন অবশ্যই সুবিধা করতে পারবেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিয়ে বাকী অংশ রাশিয়ার দখলে রেখে ট্রাম্পের সাথে কোনো এক সমোঝোতায় হয়তো পুতিন যেতে পারেন। ইউক্রেনেরও এর বাইরে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। আমেরিকার সাহায্য ছাড়া নিজস্ব তহবিল থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো ক্ষমতা কি ইউক্রেনের এখন আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করলেই উত্তর মিলে যাবে।
পুতিন এখন ইউক্রেন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বাকি যায়গা গুলোতেও সুবিধা জনক অবস্থানে যেতে চাচ্ছেন। উদাহরণ স্বরুপ সাম্প্রতিক সময়ে কাজাখস্তান সফরের কথা বলতে হয়। ২৭ নভেম্বর ২০২৪, পুতিন দুইদিনের সফরে কাজাখস্তান এসেছেন। উল্লেখ্য, আয়ত্বের দিক দিয়ে কাজাখস্তান বিশ্বের সর্ববৃহত মুসলিম দেশ এবং বিশ্বের মধ্যে নবম। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ (পুরো পৃথিবীর ৪৩%) এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদে ভরপুর মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রটির সাথে রাশিয়ার প্রায় ৭৫০০ কি.মি. দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা পৃথবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ স্থল সীমান্ত। একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকা দেশটির সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক বেশ শক্তিশালি এবং গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক ভাবেই পুতিনের কাছে কাজাখস্তান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিনে থাকার জন্য দেশটির জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ রাশিয়ান ভাষাভাষী। কিন্তু পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের পরে দেশটির জনগণের কাছে রাশিয়া অনেকটাই অজনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এমনকি কাজাখদের মধ্যে অনেকটা জাতীয়তাবাদী চেতনার উত্থান দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কাজাখ মুদ্রা থেকে রাশিয়ান ভাষার ব্যাবহার মুছে ফেলা তারই ইঙ্গিত করে।
কাজাখস্থানের সাথে মার্কিন মুলুকের সম্পর্ক সময়ের সাথে সাথে শক্তিশালী হচ্ছে। হয়তো পুতিন সেই দিক নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। কাজাখস্তানে প্রথম নিউক্লিয়ার পাউয়ার প্লান্ট স্থাপন করতে যাচ্ছে রাশিয়ান কোম্পানি রোস্টাম। এই বিষয় নিয়ে কাজাখস্তানে ভোটের আয়োজন করা হয় এবং শতকরা ৭১ শতাংশের উপরে ভোট এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যায়। রাশিয়ার মাধ্যমেই কাজাখস্তান তার বেশিরভাগ খনিজ সম্পদ রপ্তানি করে। ইউক্রেন যুদ্ধের পরে কাজাখস্তান বিকল্পের সন্ধানে রয়েছে। পুতিনের সফর মূলত জ্বালানি এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করতেই। পুতিন তার হারানো সম্মান, আস্থা, শক্তি ফিরে পেতে চাচ্ছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর পুতিনের বৈদেশিক সফর অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো আন্তর্জাতিক চাপের জন্য। পুতিন আবার নতুন উদ্যমে ফিরছেন। আগামী দিনে বিশ্ব পুতিনকে আবারো সক্রিয় দেখবে, এটাই স্বাভাবিক!
anjar011224/1