আদালতের রায়ে হাসান আহমদ জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত

Daily Daily

Zakiganj

প্রকাশিত: ১২:২২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
হাসান আহমদের সমর্থকরা এই রায়কে “ন্যায়ের জয়” হিসেবে দেখছেন।ছবিঃ ফেসবুক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  প্রায় তিন বছরের আইনি প্রক্রিয়া শেষে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট পুনর্গণনায় ৩৭৮ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে হাসান আহমদকে। আদালতের এই রায়ের ফলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ।

হাসান আহমদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর জকিগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক এবং জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাকে ষড়যন্ত্র করে ১৫৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত ঘোষণা করা হয়েছিল। ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় আমি ২০২২ সালে আদালতের দ্বারস্থ হই। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতের নির্দেশে ভোট পুনর্গণনা করে দেখা গেছে, আমি ৩৭৮ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “আদালতের রায়ে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এটি শুধু আমার জন্য নয়, ভোটারদের ন্যায্য অধিকারের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।”

এই রায়ের পর স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। হাসান আহমদের সমর্থকরা এই রায়কে “ন্যায়ের জয়” হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে, প্রতিপক্ষ দলের প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি।

চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর হাসান আহমদ ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করব। আমার লক্ষ্য হবে জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করা।”

এ রায় স্থানীয় রাজনীতি এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারিতে জকিগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি ইউনিইয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছিল । সেদিন গ্রেফতার হয়েছিলেন জকিগঞ্জের নির্বাচন কর্মকর্তা শাদমান সাকিব। অভিযোগ ছিল নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ, সিল মারা ব্যালট বিক্রি, কেন্দ্রে পৌঁছানো সহ নানা ঘটনা তিনি টাকার বিনিময়েই ঘটিয়েছেন। ইউপি নির্বাচনে তিনি টাকার নেশায় মেতে উঠায় শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হতে হয়েছিল । জকিগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা জানিয়েছিলেন , সাদমান সাকিব ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে টাকা আয়ের ধান্ধা শুরু করেন। তার তরফ থেকেই একাধিক প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। অনেকেই তার এই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। তবে প্রতীক বরাদ্দের সময় তিনি পছন্দের প্রতীক পাইয়ে দিতে প্রার্থীদের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নেন। এরপর নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ করা নিয়ে প্রার্থীদের নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করেন। ভয় দেখিয়েও লুটে নেন টাকা। আর নির্বাচনের আগে পছন্দের প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, প্রকাশ্য টাকার নেশায় মেতে উঠায় গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন সাদমান সাকিব। আর ভোটের দিন গোয়েন্দা জালেই তিনি বন্দি হন। পরবর্তীতে নির্বাচনের দিন রাতে যখন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে জেরা করেন; তখন সাদমান সাবিক সব স্বীকারও করেন। এ সময় তিনি নিজেকে বাঁচাতে ঊর্ধ্বতনদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তার কথায় কর্ণপাত করেননি কেউ। বরং আইনের পথেই হাঁটেন সবাই। নির্বাচন কর্মকর্তা সাদমান সাকিবের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হক নির্বাচন কর্মকর্তা শাদমানের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে আরিফুল হক সিলমারা ব্যালট কেন্দ্রে পৌঁছাতে রাজি হয়েছিলেন। এরপর হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন তারা।

anjar031224/2